মনে হচ্ছে মা হওয়ার বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছেন... (2025)

সন্ধ্যা ছয়টা। বিছানায় দীপিকা পাড়ুকোন। হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে আছেন। সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মানুষ যেমন খানিকটা বুঁদ হয়ে থাকেন, তেমন এক স্থির মুহূর্ত। সাত মাস আগে মা হয়েছেন। সন্তানের ঘুমের ফাঁকে নিজের জন্য একটু বিশ্রাম নিতে পারলেই যেন স্বস্তি।

দুই দশক আগে কন্নড় চলচ্চিত্র দিয়ে যাত্রা শুরু, তারপর ওম শান্তি ওম-এর মাধ্যমে বলিউড জয়। দীপিকা পাড়ুকোন মানেই চিত্রনাট্যের নিখুঁত নায়িকা, ঝলমলে এক তারকা। ৪০টির বেশি সিনেমার অভিজ্ঞতা, ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রীদের একজন।

ঘুম আমার জন্য সবচেয়ে উপকারী ও অবমূল্যায়িত স্বাস্থ্য-চর্চা। আগে প্রতিদিন ঘুমের মান পরিমাপ করতাম। এখন হয়তো ১০ মিনিট পেলেই চোখ বন্ধ করি

দীপিকা পাড়ুকোন

রণবীর সিংয়ের সঙ্গে বলিউডের প্রভাবশালী তারকা দম্পতির একজন। ফ্যাশনের মঞ্চে সাব্যসাচীর শো ওপেনার, আবার লুই ভুইতোঁ আর কার্তিয়েরের মতো ব্র্যান্ডের মুখ। ৮ কোটির বেশি অনুসারী এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী মুখ। শাহরুখ খান, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো তারকাদের সঙ্গে মিলে যিনি ভারতের বহু কোটি টাকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। কান, অস্কার বা মেট গালার লালগালিচা—সবখানেই দীপিকার পদচারণ।

তবু সাক্ষাৎকারের সময় আটপৌরে পোশাকে হাজির হলেন সেই দীপিকা। পরনে সাদা ওভারসাইজ টি-শার্ট, কালো পায়জামা। মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। নির্ভার, স্বচ্ছন্দ, সদ্য মাতৃত্বের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছেন—মা দীপিকা।
প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘আমি হারিয়ে গেছি—এ কথা বলব না। আবার নিজেকে পুরোপুরি খুঁজে পেয়েছি বলেও মনে হয় না। আমি যেন নতুন এই অবস্থার মধ্য দিয়ে পথ খুঁজে নিচ্ছি।’

প্রথমবার মা হওয়া অনেক নারীর মতো তিনিও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন নিজের সঙ্গে সন্তানের জীবনের ভারসাম্য রাখার চেষ্টায়। ক্লান্তি আর উচ্ছ্বাসের মাঝে দুলছেন, নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে গিয়ে নতুন জীবনের ভার কাঁধে নিচ্ছেন। এখন তিনি কাজ করছেন আংশিক—কখনো সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে, কখনো আবার ন্যানির সহায়তায়। কিছুদিন শুটিং, কিছুদিন শুধু বাসা—মেয়ে দুয়ার স্নান আর ঘুমের সময়টাই যেন তাঁর দিনযাপনের মূল।

‘আগের মতো কাজ করতে পারব কি না, জানি না। আবার চাইও কি সেটা? হয়তো এটাই আমার নতুন রুটিন,’ বলেন তিনি। তারপর যোগ করেন, ‘দেখা যাক, কীভাবে বদলায় সবকিছু।’ তবে দীপিকার এই গতি-ধীরতা সবার কাছে সহজবোধ্য নয়। এক পরিচালককে দেখা করতে না যাওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে বলেন, ‘বাচ্চার জন্য বাসায় থাকতে হবে।’ উত্তরে শুনতে হয়, ‘মনে হচ্ছে মা হওয়ার বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছেন!’

‘এটা প্রশংসা না বিদ্রূপ—বুঝতে পারিনি,’ বলে অদ্ভুত এক হাসি হাসলেন দীপিকা, এরপরই বলে উঠলেন, ‘মা হওয়াকে সিরিয়াসলি নেওয়া কি অন্য রকম কিছু?’
ন্যানি, পরিবার ও পরিচিতির সুবিধা থাকলেও তাঁর কণ্ঠে তখন অন্য কোনো নতুন মায়ের মতোই দোলাচল। বলেন, ‘নিজেকে বারবার বলতে হয়, মা হয়েছি মানে জীবন থেমে যায়নি। আগের জীবনটা পুরোপুরি হয়তো ফিরবে না, কিন্তু কিছুটা তো থাকা দরকার। অথচ ওর সঙ্গে না থাকলে অপরাধবোধে ভুগি।’ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে জন্ম নেয় পাড়ুকোন-সিং দম্পতির কন্যা দুয়া। স্মৃতিতে ফিরে যান তিনি—‘জটিল গর্ভাবস্থা, কঠিন প্রসব—সবকিছু পেরিয়ে সন্তান কোলে নেওয়ার মুহূর্ত।’
নভেম্বরে গিয়ে ঠিক হয় নাম—দুয়া। আরবি শব্দ, অর্থ প্রার্থনা। নাম নিয়ে তাঁরা তাড়াহুড়া করেননি। আগে সন্তানকে অনুভব করতে চেয়েছেন, বুঝতে চেয়েছেন তার উপস্থিতি। সাহায্য নিয়েছেন কবিতা আর গান থেকেও। এক রাতে স্বামীর শুটিং চলাকালীন হঠাৎ টেক্সট করেন—‘দুয়া?’ সাড়া আসে এককথায়—‘হ্যাঁ।’ আর তাতেই শেষ।

বছর পাঁচেক বয়সেই বুঝেছিলেন, মা হতে চান। তখন বোন অনিশা জন্মায়, আর তার ‘মাতৃত্ববোধ’ জেগে ওঠে। তাই সন্তান নেওয়া তাঁর জন্য ‘হবে কি না’ নয়, ‘কবে’ প্রশ্ন। পারিবারিক চাপ ছিল না। সমাজের চেনা বাধ্যবাধকতাও সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। স্বামী রণবীরও সব সিদ্ধান্তে তাঁকে এগিয়ে থাকতে দিয়েছেন। ‘তোমার শরীর, সিদ্ধান্তও তোমার,’ বলেছিলেন তিনি।

আজ তাঁর জীবন দুটি ভাগে বিভক্ত—দুয়ার আগে, দুয়ার পরে। বলেন, ‘আমার ভেতরের কেন্দ্রটা যেন বদলে গেছে।’ রণবীর যোগ করেন, ‘এটাই এখন দীপিকার সবচেয়ে সুন্দর রূপ।’ তাঁদের প্যারেন্টিং সমান সমান। দুজনই সন্তানের পাশে থাকতে চান। ক্যামেরার সামনে জীবন কাটানোয় অভ্যস্ত দীপিকা বুঝে গেছেন—আলোচনার বাইরের শব্দ উপেক্ষা করাই শ্রেয়। ‘আমি সব সময়ই নিজের অন্তর্জ্ঞান শুনেছি। বাইরে কে কী ভাবল, সেটা নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই,’ বললেন দৃঢ় কণ্ঠে।

আরও পড়ুন

দীপিকা সেরা মা হবেন: শাহরুখ খান০১ মে ২০২৫

বেঙ্গালুরুতে বেড়ে ওঠা, বাবা (প্রখ্যাত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়) প্রকাশ পাড়ুকোনের জীবনের ছায়ায় কাটানো শৈশব তাঁকে শিক্ষা দিয়েছে, কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে বাঁচতে হয়। ‘বাবা কোনো দিন বলেননি যে তিনি তারকা। আমরা সেটা বুঝেছি কেবল নিজের কৌতূহল থেকে।’

এমন সাধারণ, ছিমছাম শৈশবই চান মেয়ে দুয়ার জন্য। তাই এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় দুয়ার মুখ প্রকাশ করেননি। সাবধানে প্রতিটি কথায় ভাবছেন—কোনো অপ্রয়োজনীয় তথ্য যেন গণমাধ্যমে চলে না যায়।
রণবীর অবশ্য বলেন, দীপিকা ইনস্টাগ্রাম রিল ঘেঁটে নিয়মিত পাঠান তাঁকে—শিশু পালনের টিপস! ‘সবই কাজে লাগে, দুয়াই এখন দীপিকার জীবন। সবকিছুই তার ওকে কেন্দ্র করে ঘোরে,’ বলেন তিনি।

নিজের স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখছেন দীপিকা। ২০১৪ সালে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সরব হয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন তিনি। গর্ভাবস্থা ও সন্তানের জন্ম–পরবর্তী সময়েও সে চেতনা থেকে সরে যাননি। পরিবার, বন্ধুরা পাশে ছিলেন সব সময়।
প্রতিদিন তিন লিটার পানি পান, শরীরচর্চা—সবই তাঁর রুটিনের অংশ। ‘প্রসবের পর থেকে ঠিক করেছিলাম—নিজেকে সময় দেব, শরীরকে ভালোবাসব, ধন্যবাদ জানাব।’ এখন ধীরে ধীরে নিজের শরীরকে ফিরে পাচ্ছেন। শক্তি, সহনশীলতা, আত্মবিশ্বাস—সবকিছু যেন একটু একটু করে ফিরে আসছে। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এটি সৌন্দর্য নিয়ে কোনো আলোচনার অংশ নয়। সন্তান জন্মের পর ‘বাউন্স ব্যাক’ নয়, বরং ‘ধন্যবাদ জানানো’ই তাঁর লক্ষ্য।

আরও পড়ুন

রণবীর বলেছিল তোমার শরীর, সিদ্ধান্তও তোমার: দীপিকা০৮ মে ২০২৫

সবশেষে ঘুমের প্রসঙ্গ আসে, কারণ আলোচনার সূচনাটাই হয়েছিল তাঁর বিছানা থেকে। ‘ঘুম আমার জন্য সবচেয়ে উপকারী ও অবমূল্যায়িত স্বাস্থ্য-চর্চা। আগে প্রতিদিন ঘুমের মান পরিমাপ করতাম। এখন হয়তো ১০ মিনিট পেলেই চোখ বন্ধ করি।’ শেষে বলেন, ‘যখন তাকিয়ে দেখি—এই ছোট্ট মানুষটা আমার…আমরা দুজনই ভাবি, এটা কি সত্যি? স্বপ্ন মনে হয়।’

(ঈষৎ সংক্ষেপিত)

মনে হচ্ছে মা হওয়ার বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছেন... (2025)
Top Articles
Latest Posts
Recommended Articles
Article information

Author: Arline Emard IV

Last Updated:

Views: 6553

Rating: 4.1 / 5 (52 voted)

Reviews: 83% of readers found this page helpful

Author information

Name: Arline Emard IV

Birthday: 1996-07-10

Address: 8912 Hintz Shore, West Louie, AZ 69363-0747

Phone: +13454700762376

Job: Administration Technician

Hobby: Paintball, Horseback riding, Cycling, Running, Macrame, Playing musical instruments, Soapmaking

Introduction: My name is Arline Emard IV, I am a cheerful, gorgeous, colorful, joyous, excited, super, inquisitive person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.